Sputnik Sweetheart ভালবাসার আর একাকীত্বের গল্প By Haruki Murakami
মাঝে মাঝে এই
মানুষের জটলায় মনে হয় আমরা সবাই ভ্রমনসঙ্গী।উপভোগ্য ভ্রমণসঙ্গী। এত এত মানুষ এত এত
সঙ্গী, কিন্তু দিনশেষে আমরা মহাশুন্যের এক খন্ড পাথরের টুকরার মতো।আপন কক্ষপথে ঘুরছি,
অনন্তকালের জন্য। আমাদের সব সঙ্গীরাও ঘুরছে নিজ কক্ষপথে। এই চলমান প্রক্রিয়ায় নিদির্ষ্ট
সময় অন্তরে অন্তরে আমাদের দেখা হয়, ক্ষনিকের জন্য। তারপর আবার একাকীত্ব। অনন্ত একাকীত্ব।
যতদিন না আমরা নক্ষত্রের মত নিঃশ্বেস হয়ে যাচ্ছি। আচ্ছা মানবজাতি মহাশুন্যের এক খন্ড
পাথরের মতো একা কেনো? এত এত মানুষ চারপাশে, সব্বাই ঘুরছে, নিজের একাকীত্বের হাত থেকে
নিস্তার পেতে, তবু আমরা সবাই একা। কেনো? পৃথিবীতে কি আমাদের পাঠানোই হয়েছে, একাকীত্বের
জয়গান গাওয়ার জন্য? প্রশ্নগুলো আমার না, প্রশ্নগুলো জাপানি লিজেন্ড হারুকি মুরাকামির।
বইয়ের নাম স্পুটুনিক সুইটহার্ট। স্পুটুনিক ১ মহাশুন্যে পাঠানো প্রথম স্যাটেলাইট। পাঠানো
হয় অক্টোবরের চার তারিখ ১৯৫৭ সালে। ঠিক ২৯ দিন পর আরেকটা স্যাটেলাইট পাঠানো হয়, নভেম্বরের
তিন তারিখে সাথে পাঠানো হয় লাইকাকে(একটা কুকুর)। লাইক হচ্ছে মহাকাশে পাঠানো প্রথম প্রান।
কিংবা বলা যায় মহাশুন্য আবিষ্কারের নেশায় বলি দেওয়া প্রথম প্রান। স্পুটনিক ২ মহাকাশে
হারিয়ে যায়, সেই সাথে হারিয়ে যায় লাইকা। একবার ভাবুন তো, এক অনন্ত মহাশুন্যে, স্পুটনিক
২ এর জানালা দিয়ে একটা কুকুর তাকিয়ে আছ! কি ভাবছিল সে? ভয় পেয়েছিল, কিছুক্ষন চিৎকার
করেছিল, হয়তো তারপর মানুষের নিষ্ঠুরতা মেনে নিয়েছিল। আমরা কোনোদিন জানতে পারবো না,
লাইকা কি ভাবছিল। আমরা সবাই কি লাইকার মতো না? যেন এক অনন্ত অন্ধকারে ভীষণ একা হয়ে
ছুটে চলছি। যেন এই যাত্রার কোনো শেষ নেই, এই অন্ধকারের কোন শেষ নেই।
গল্পের নাম স্পুটনিক
সুইটহার্ট হয়তোবা এই জন্যেই। এই উপন্যাসে হয়তো মুরাকামি মানবজাতির শুন্যতা, একাকীত্বের
সত্যি রুপ দেখাতে চেয়েছেন। বলতে চেয়েছেন যত চেষ্টাই করো, তোমার পাশের বালিশে যে আছেন,
তিনি তোমার আগে ঘুমিয়ে পড়লেই তুমি একা। তুমি আগে ঘুমিয়ে পড়লে সে একা। দিনশেষে মানবজাতির
গল্পটাই ক্লান্তিকর একাকীত্বের। মাঝে আই লাভ লনলিনেস, আই এম দ্যা হ্যাপিয়েস্ট টাইপের
কিছু মেকি বানী।
গল্পের কেন্দ্রীয়
চরিত্র ২২ বছরের তরুনী সুমির। সুমির লেখিকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তার একমাত্র
বন্ধু আমাদের গল্পের ন্যারেটর। আমাদের গল্পের ন্যারেটরের একমাত্র বন্ধুও সুমির। মনে
মনে বক্তা সুমিরকে ভালবাসে। সুমিরের চেহারায় আহামরি কিছু নেই। আর দশটা সাধারণ মেয়ে
থেকে সে সম্পূর্ন আলাদা। রান্না করতে পারে না, সাজতে পারনে, নিজের পোশাক নিয়ে কোনো
মাথাব্যাথা নেই, সৌন্দর্য নিয়ে কোনো মাথাব্যাথা নেই।সে কেবল বই পড়তে পারে, আর লিখতে
পারে।কিন্তু তার কোনো লিখাই কেনো যেন শেষটায় মিলে না। তাই সে পরিপূর্ন লেখিকা হয়েও
উঠতে পারে না। আমাদের বক্তা স্কুলের শিক্ষক, সেও কঠিন বই প্রেমি। তাদের মধ্যে চমৎকার
ক্যামিস্ট্রি। ন্যারেটর সাহেব সুমিরের প্রেমে পড়ে আছে বহু আগে থেকেই, কিন্তু সুমিরের
প্রেম ভালবাসা সেক্স এসবের প্রতি মাথাব্যাথা নেই। রাত তিনটায় একটা টেলিফোন বুথ থেকে
ফোন দিয়ে সিগারেট টানতে টানতে সে আমাদের ন্যারেটর কে প্রশ্ন করে আচ্ছা সাইন আর সিম্বলের
মধ্যে পার্থক্য কি? পাগল আর কাকে বলে!
একদিন একটা বিয়ের
অনুষ্ঠানে সুমিরের দেখা হয় মিউ এর সাথে। মিউ একজন বিবাহিতা ৩৫ বছর বয়সের মহিলা। অসম্ভব
রুপবতী। সুমির আবিষ্কার করে সে লেসবিয়ান, সে মিউ এর প্রেমে পড়ে গিয়েছে। মিউ এর জন্য
সে যে কোনো কিছু করতে পারে। একদিকে আমাদের ন্যারেটর নিজের প্রেমের কথা বলতে পারে না,
অন্যদিকে সুমির তার প্রেমের কথা বলতে পারে না। আমি একজনের প্রেমে পড়ে আছি, কিন্তু কিছু
কারনে বলতে পারি না। সেই মানুষটার সাথে প্রতিদিন আমার দেখা হয়। এই অনুভূতিটা কি আপনার
আছে? যদি না থাকে, আপনি অনুভূতিটা একদম কাছ থেকে দেখতে পাবেন। ভালবাসি বলতে না পারার
কষ্টের গভীরতা কতখানি বুঝতে পারবেন।
মিউ সুমিরকে তার
এসিস্ট্যান্টের চাকরি দেয়।তাদের মধ্যে ভাল বন্ধুত্ব হয়। আর ব্যবসায়ের কাজে তারা ঘুরতে
বের হয়। গল্পটা চমৎকারভাবে এগিয়ে যেতে থাকে। মনে হচ্ছে শেষ পর্যন্ত আমাদের ন্যারেটর
বাবাজী একা হয়ে পড়বেন। কিন্তু লেখক যেখেতু মুরাকামি শেষটা এত প্রিডিক্টেবল হবে না।
তারপর উপরে সে শুরু থেকেই একাকীত্বের গল্প বলেছে। তাই চমক তো আছেই।
এই উপন্যাসের
মধ্যে ভালবাসা আর জীবনের অপূর্ব বিবরণ পাওয়া যাবে। পাওয়া যাবে আরেকটা রহস্যময় জীবন
যেটা এই জীবনের সাথে সাথেই বিরাজ করে। আচ্ছা একটা জীবনে আমরা অনেক কিছুইতো হারিয়ে ফেলি,
তাই না? এই হারিয়ে যাওয়া জিনিসগুলো যদি আসলে না হারায়? বরং অন্য একটা ডাইমেনশানে চলে
যায়। ধরলাম আরেকটা দরজা আছে, যেটার অস্তিত্ব অল্প কিছু মানুষ বা জিনিস টের পায়। এরা
সেই দরজা দিয়ে আরেকটা জায়গায় চলে যায়, যেখানে আমরা যেতে পারি না। যেই জায়গা আমাদের
আশেপাশেই। এমন যদি হয় আপনার প্রিয় কেউ যিনি মারা গেছেন, আসলে মারা যান নি? দরজা দিয়ে
অন্য একটা ডাইমেনশানে চলে গিয়েছেন। এটা যদি সত্যি হয় আপনি কি সেই জগতে যাবেন? নিজের
প্রিয়জনের কাছে? যদি সেটা ওয়ানওয়ে এন্ট্রি হয় তাহলে যাবেন?
আমার ভাল লেগেছে।
তবে মুরাকামির চরিত্রগুলো কেমন যেন প্রিডিকটেবল। কিন্তু তার জীবন দেখার চোখ অসাধারন।
পড়লে ভাল লাগবে আসা করি।
Book:
Sputnik Sweetheart.
Writer:
Haruki Murakami.
Translator:
Philip Gabriel.
Page:229
আরো পড়তে পারেনঃ
কোন মন্তব্য নেই