শহরের কথা
গভীর রাতের কিছু কথা ছিল। কিছু কথা ছিল নিয়ন বাতির হলুদ আলোর । হয়ত সে বলতে চাচ্ছিল আমাকে গায়ে জড়িয়ে একবার এক শ্যাম তরুনী এলোমেলো ঝাঁকড়া চুলের এক ঠগবগে যুবকে কথা দিয়েছিল আঙুলের ফাকে আঙুলের স্পর্শ কখনো হারাবে না! তরুনী কথা রাখেনি! যুবক প্রতিরাতে এসে হলুদ আলো গায়ে মাখত উদাস মনে। তারপর একদিন আর আসলো না! তারপর কোনদিনও আর আসল না!
শেষে বাসের ড্রাইভারেও হয়তো কিছু কথা ছিল। সারাদিন এই জ্যামের শহরে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে যেতে তার হয়ত আর ভাল লাগে না। ক্ষনে ক্ষনে তার ছোট বাবুটিকে বড্ড মনে পরে। এই গালিগালাজ এই তর্কের খেলায় সে হয়ত বড্ড ক্লান্ত
সারাদিনে তিন চাকার প্যাডেল ঘুরানো সেই যুবকেরও হওতো কিছু কথা ছিল। শহরটা সব নিংড়ে নিজের করে নিল। শেষ খ্যাপে ফিরতে ফিরতে সে হয়ত ভাবছিল আজ ফুলির জন্য এক তোড়া ফুল নিলে কেমন হয়! তাতে কি ভাতে টান পড়ে? মহাজনের টাকা দিতে দিতে ভাবে আজও হলো না!
স্টেশানে বস্তা মোড়ানো পিচ্চিটার রাতের স্বপ্নেও হওত রাজকুমারী আসে রাজপুত্রের বেশে সেও হয়ত হারায় কোন খেলার মাঠে যেখানে পিঠে ময়লার বস্তা থাকেনা। থাকেনা এক মুঠো ভাতের জন্য ছুটে চলা! কথাগুলা শোনা হয় না। হাহাকার হয়ে হারিয়ে যায় শহুরে রাতের নিস্তব্ধতায়।
সেই একা চাঁদেরও কিছু কথা ছিল হয়ত! লোডশেডিং এর রাতে শহরটাকে রুপালী চাদরে মুড়িয়ে দিতে আজও হয়ত তার বড্ড ইচ্ছে করে! আজও হয়ত সে বসে ভাবে ছেলেমেয়েগুলো কিচিরমিচির করতে করতে লুকোলুকি খেলায় আবার কবে মশগুল হবে!
অন্ধকারে পাহারাদার সেই কুকুরটারও হয়ত কিছু কথা ছিল! শোনা হয়না কিছুই!
নিস্তব্ধ রাত,দূরের ছুটে চলা ট্রেনের মৃদু শব্দ, আর ক্ষনে ক্ষনে ছুটে চলা রাতের বাসের হর্নের সাথে মাতাল হাসনাহেনার গন্ধ মাখানো এই শহরটা তার একাকিত্বের মাঝে কথাগুলো গিলে নেয়! পরদিন আবার সেই ছুটে চলা!
কোন মন্তব্য নেই